আজ ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সময় : ভোর ৫:৩৬

বার : বৃহস্পতিবার

ঋতু : গ্রীষ্মকাল

রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে পুলিশের হামলায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উদ্বেগ

রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে পুলিশের হামলায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উদ্বেগ


পুলিশের হামলায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উদ্বেগ প্রকাশ

পুলিশের হামলায় হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উদ্বেগ প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিনিধি

বিএনপিসহ বিরোধী দল গুলোর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। এই মানবাধিকার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জুলাইয়ের শেষের দিকে বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশ নির্বিচারে রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ এবং বিরোধী দলের সমর্থকদের লাঠিপেটা করেছে। ২৯শে জুলাই একটি বড় বিক্ষোভের আগের দিনগুলোতে কর্তৃপক্ষ প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ৮০০ জনেরও বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। এটি রাজনৈতিক বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু এবং আটক করার একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা বলে মনে হয়।

সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এইচআরডব্লিউ বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমন গিলমোর ও বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে আসা ইইউ প্রতিনিধিদলের সফরের সময়ও নির্বাচন বিষয়ে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া’ ক্ষুণ্ণ করলে নতুন ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উচিত রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর নৃশংস দমন-পীড়নকে বাংলাদেশের নির্বাচন গণতান্ত্রিক হবে না- এমন সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার করছে, যদিও তারা স্বৈরতান্ত্রিক ও অবমাননাকর হামলা চালাচ্ছে, যা স্পষ্টতই এই দাবির বিপরীত।

এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বিএনপি নেতারা বলছেন, বিক্ষোভে তাদের অন্তত ১০০ সমর্থক আহত হয়েছেন। পুলিশ ও বিরোধী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ভিডিওতে দেখা যায়, নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র লোকদের লাথি মেরে ও আঘাত করে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিরোধী বিক্ষোভকারীরা পাথর নিক্ষেপ ও পুলিশের গাড়িতে হামলা চালালে কমপক্ষে ৩২ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।

এদিকে ২৯শে জুলাই সমাবেশের জন্য বিএনপিকে অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানায় পুলিশ। তবে এইচআরডব্লিউর মতে, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকার এবং বিক্ষোভকে ছত্রভঙ্গ করতে মানবাধিকারের মানদণ্ডকে সম্মান করতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের মৌলিক নীতিগুলো পুলিশকে বল প্রয়োগের আশ্রয় নেওয়ার আগে কোনও অঞ্চল খালি করার জন্য অহিংস উপায় ব্যবহার করতে বলে।

‘কম প্রাণঘাতী অস্ত্র’ ব্যবহারের বিষয়ে জাতিসংঘের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, রাবার বুলেটের মতো অস্ত্র কেবলমাত্র সর্বশেষ উপায় হিসাবে ব্যবহার করা উচিত- আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা বা জনসাধারণের কোনও সদস্যের আঘাতের আসন্ন হুমকি মোকাবেলার লক্ষ্যে। আর শুধু জনসাধারণের ব্যাপক ক্ষতি হবে, প্রাণহানি বা গুরুতর আঘাতের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে- এমন পরিস্থিতিতে কেবল জলকামানগুলো ব্যবহার করা উচিত।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও বলছে, গত ২৯শে জুলাই বিএনপির সমাবেশের আগের সপ্তাহগুলোতে দেড় হাজারের বেশি বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী এবং অজ্ঞাতনামা ১৫ হাজারের বেশি ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বিপুল সংখ্যক ‘অজ্ঞাত’ লোকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ ব্যবহার করা বাংলাদেশে একটি সাধারণ অপমানজনক অভ্যাস। এর মাধ্যমে পুলিশকে কাউকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিতে এবং হুমকি দেওয়ার অনুমতি দেয়, মামলার অভিযুক্ত না হওয়া সত্ত্বেও বন্দীদের বারবার পুনরায় গ্রেপ্তার করতে দেয় এবং জামিনের আবেদনগুলো ব্যর্থ করে দেয়।

বিগত মাসগুলোতে, আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা রাজনৈতিক হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শনের জন্য রাজনৈতিক বিরোধী সদস্যদের বাড়িতে অভিযান চালানোর জন্য এই উন্মুক্ত মামলাগুলো ওয়ারেন্ট হিসাবে ব্যবহার করেছেন। বিএনপির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ১২ই জুনের মধ্যে নেতা-কর্মী ও সমর্থক ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে ৪০ লাখের বেশি মামলা হয়েছে।

জুলাইয়ের সমাবেশের আগে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ ফোন চেক করছে এবং রাজধানী ঢাকায় প্রবেশকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, যেহেতু নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, তাই আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বল প্রয়োগের নিয়ম মেনে চলার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া এবং যারা এই মান লঙ্ঘন করবে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি।

ইইউ’র বিশেষ প্রতিনিধি গিলমোর ঢাকা সফরকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা যখনই নির্বাচনের দিকে তাকাই, আমরা ভোটের দিন কী ঘটে তা দেখি না। আমরা নির্বাচনপূর্ব পরিবেশ, রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা, রাজনৈতিক বিতর্ক, গণমাধ্যম এবং নির্বাচন আয়োজনের জন্য কী ব্যবস্থা আছে তাও দেখি।

প্রতিবেদন বলছে, ইইউসহ বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের প্রকাশ্যে জোর দেওয়া উচিত, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে গুরুতর অপব্যবহার মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থতা বাণিজ্য সুবিধা এবং অন্যান্য সহযোগীতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী আরও বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলের কঠোর নজরদারির মধ্যে থাকার বিষয়টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ভালোভাবে অবগত। তাই নিবর্তনমূলক গণগ্রেপ্তার ও সহিংস দমনাভিযানের মধ্য দিয়ে বিরোধীদের অকার্যকর করলে বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে মনে করার মতো বোকা কোনো ব্যক্তি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category